মক্কায় হজ চুক্তিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা আরও ১০ হাজার বাড়িয়েছে রাজকীয় সৌদি সরকার।
মক্কায় হজ চুক্তিতে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণলয়। বর্তমানে এক লাখ ২৭ হাজারের সঙ্গে নতুন করে আরো ১০ হাজার হজযাত্রী পবিত্র হজব্রত পালন করার সুযোগ পাবেন।
২০২০ সালের সৌদি-বাংলাদেশ হজচুক্তির জন্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল গত ২ ডিসেম্বর সৌদি আরব যায়।
বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) সৌদি আরবের জেদ্দায় ২০২০ সালের বাংলাদেশ-সৌদি আরব হজ চুক্তি অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের হজ চুক্তিতে বাংলাদেশের বর্তমান মুসলিম জনসংখ্যার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ২০ হাজার বাংলাদেশি হজযাত্রীর হজের অনুমতি চাওয়া হয়।
বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ হারে হজযাত্রীর জেদ্দা এবং মদিনায় ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তাব করা এবং সৌদি আরব অংশের বাংলাদেশি শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করার প্রস্তাব করা হয়। তবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা এখনো জানানো হয়নি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, আগামী বছর অতিরিক্ত ১০ হাজারসহ সর্বমোট এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯১ জন হজযাত্রী হজে যেতে পারবেন।
সৌদি হজ ও ওমরাহর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এবং সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ সালেহ তাহের বেনতেন চুক্তিতে সই করেন।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, আগামী ২০২০ সালের হজে বাংলাদেশের হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ১০ হাজার। এজেন্সি প্রতি হজযাত্রীর সর্বনিম্ন সংখ্যা ১০০ এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা ৩০০ বহাল রাখা থাকছে (চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমান বন্দর ব্যবহারকারী হজযাত্রী ছাড়া)।
শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন সৌদি আরবের পরিবর্তে ঢাকায় সম্পন্ন করা হবে। মদিনা থেকে হজ ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। হজ এজেন্সিগুলোর জন্য এআইটিএ সনদ থাকার শর্তারোপ করা হচ্ছে না। প্রত্যেক হজযাত্রীর ইন্স্যুরেন্স কভারেজ দেবে সৌদি সরকার। রুট টু মক্কার মতো ফিরতি হজযাত্রীদের জন্য রুট টু ঢাকা’র সুবিধা চালু করা বিষয় রয়েছে। এছাড়া পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি এবং উন্নত করার আশ্বাস রয়েছে। এবারও মিনায় দ্বিতল খাট না রাখার বিষয় উল্লেখ রয়েছে চুক্তিতে।
এর আগে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ প্রতিমন্ত্রী ডক্টর আব্দুল ফাত্তাহ বিন সোলায়মান মাশাতের নেতৃত্বে সৌদি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
২০২০ সালের হজ চুক্তির বৈঠকে বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ যেসব প্রস্তাব তুলে ধরেন সেগুলো হলো- বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা বাড়ানো, রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের আওতায় শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন বাংলাদেশে করা এবং হজ শেষে দেশে ফেরার সময় জেদ্দা ও মদিনা এয়ারপোর্টে হাজিদের ইমিগ্রেশন সহজ করা, হাজিরা ৪২ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিনের কম সময়ে দেশে ফিরতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ, ভিসা প্রসেসিং সহজ করা, খাওয়া-থাকাসহ সৌদি আরবে বাংলাদেশি হাজিদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, কালো তালিকাভুক্ত বেসরকারি এজেন্সির তালিকা দ্রুত প্রকাশ করা, হাজিদের জন্য বাধ্যতামূলক খাবার সরবরাহের প্রথা বন্ধ করা, মিনায় উন্নতমানের বাংলাদেশি খাদ্য পরিবেশন ও উন্নতমানের আবাসনের ব্যবস্থা করা, হজের সময় বাংলাদেশের আইন লঙ্ঘন করে সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রির স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, হজযাত্রী পরিবহনে বাস সার্ভিস উন্নত করা এবং বাংলাদেশি হাজিদের জন্য ট্রেন পরিবহনের সুবিধা বৃদ্ধি করা।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসি, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান, জেদ্দার কাউন্সিলর (হজ) মাকসুদুর রহমান, হজ অফিস ঢাকার পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন আব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাৎ হোসাইন তাসলিম প্রমুখ।