সৌদি আরবের মাত্র দুটি প্রধান মসজিদে সীমিত আকারে তারাবির নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়েছেন দেশটির বাদশাহ সালমান। তবে বাইরের মুসল্লি প্রবেশে আগের নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
মক্কা ও মদিনার মসজিদ বিষয়ক প্রেসিডেন্ট বুধবার (২২ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। রয়টার্স, খালিজ টাইমসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এ খবর প্রকাশ করেছে।
রমজানে তারাবি নামাজ পড়ার অনুমতি দিলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে জনসমাগম ঠেকাতে অধিক মুসল্লি প্রবেশে আগের নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে দেশটি।
সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা (এসপিএ) মঙ্গলবার জানায়, সৌদি আরব রমজান মাসে বিভিন্ন শহরে আরোপিত কারফিউও শিথিল করার পরিকল্পনা করেছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদিতে ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় পারে রমজান মাস।
মসজিদে হারামের প্রধান ইমাম ও হারামাইন শরীফাইনের প্রেসিডেন্সির প্রধান শায়েখ আবদুর রহমান আস সুদাইস আসন্ন রমজানে তারাবি ও অন্যান্য বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন।
শায়েখ সুদাইস বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে যেহেতু আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাই সবদিক লক্ষ করে মক্কা-মদিনা বিষয়ক অধিদফতরের পক্ষ থেকে এ বছর পবিত্র রমজানের তারাবির নামাজ ১০ রাকাত পড়াসহ বেশকিছু নতুন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
১. তারাবির নামাজে ইমাম,মুয়াজ্জিন, স্টাফ এবং নির্ধারিত ব্যক্তিদের ছাড়া কেউ অংশ গ্রহণ করতে পারবে না।
২. তারাবির নামাজ ২০ রাকাতের পরিবর্তে এ বছর ১০ রাকাত পড়া হবে।
৩. প্রথম ইমাম দুই রাকাত করে তিন সালামে ছয় রাকাত এবং দ্বিতীয় ইমাম দুই সালামে চার রাকাতসহ দোয়া ও বিতর নামাজ পরিচালনা করবেন।
৪. মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীতে ইফতার আয়োজন স্থগিত থাকবে। এর পরিবর্তে মক্কা ও মদিনার আশপাশের এলাকাগুলোতে ইফতার বক্স বিতরণ করা হবে।
৫. মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীতে এ বছর রমজানের ইতিকাফ স্থগিত থাকবে।
৬. অবস্থার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী নির্দেশনা জারি করার আগ পর্যন্ত ওমরাহ স্থগিত থাকবে।
৭. তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজে পূর্ণ কোরআনে কারিম ২৯ রমজানে খতম করা হবে।
৮. যারা জানাজায় অংশগ্রহণ করবেন, তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরেই হারামে প্রবেশ করতে দেয়া হবে।
৯. বিতরের নামাজে কুনুতের দোয়া সংক্ষেপ তবে অর্থবহ করে উপস্থাপন করা হবে।
১০. প্রত্যেহ তারাবিতে কোরআনে কারিমের শুরু থেকে সুনির্দিষ্ট একটি অংশ তেলাওয়াত করা হবে।
এসব সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এছাড়া সৌদি আরবের অন্য মসজিদের ক্ষেত্রে সরকারের দেয়া পুরোনো সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
প্রসঙ্গত, অন্যান্য দেশের মত বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সৌদি আরবেও আঘাত হেনেছে।
সংবাদমাধ্যম ‘সৌদি গ্যাজেটে’ প্রকাশিত সোমবারের (২০ এপ্রিল) পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটিতে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৪৮৪ জন । এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১০৩ জন। আর, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৩৯৮ জন।
এর আগে দেশটির ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, সৌদির প্রধান দুই মক্কা ও মদিনা মসজিদে সীমিত আকারে তারাবির জামাত চালু থাকতে পারে, অন্য মসজিদে জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। আসন্ন রমজান মাসে তারাবির নামাজ কেবল ঘরেই আদায় করা হবে। কারণ করোনা ভাইরাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত মসজিদে নামাজের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হবে না।
বুধবার (২২ এপ্রিল) সে ঘোষণাই এলো।
করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির কারণে সৌদি আরবের প্রধান দুই মসজিদ তথা মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীতে আসন্ন রমজানে এ বছর ১০ রাকাত তারাবি আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।